সুমী সিকানদারের দুটি কবিতা



শাস্তি

দুর্নীতির দায়ে বাজেয়াপ্ত হোক শীতের চরিত্র
অন্যায়ভাবে জবুথুবু কুয়াশা জমছে কাচের শরীরে
ধূসর মেঘ জটলা পাকাচ্ছে কালো গাছের অল্প উঁচুতে,
পাতাপোড়া ছাই মেখে সে কিছুটা নাগালে নেমে পড়েছে।

রেললাইন থেকে উঠে আসা শিশু
আগুনের বায়োস্কোপের লোভে জড়ো হচ্ছে প্রতি সন্ধ্যায়
তারাও বড়দের সাথে খাচ্ছে রঙ-চা আর লাঠিবিস্কুট
পাতাপোড়া পটপট শব্দ আর স্ফূলিঙ্গ ঘিরে
অল্প মানুষের স্বল্পদৈর্ঘ্য অচল-চিত্র।

উদোম ঘাসে শুয়ে থাকা রাতের বাদামবিক্রেতারা
ঢুকে পড়ছে যুবতীর ঢাকনা খুলে বেরিয়ে আসা স্তনে
কোন ধস্তাধস্তির আওয়াজ নেই,
নির্বিঘ্নে ট্রেন  চলেযায়, ওম বলে কথা।
কেবল শিশুরাই শীতকালকে ক্ষমা করেছে
তারা আধাভাঙা কমলার সুঘ্রাণের মত নিষ্পাপ
বেলা বাড়লেই বাজারে ঘোরে, মিন্তি হয়
পড়ে থাকা মটরশুটির কচি দানা মট করে দু'ভাগ করে গালে ফেলে

ফের সন্ধ্যা থেকে আগুন, দিনের হাসি মরে আসে
ত্রাণে পাওয়া মাফলার আর কম্বলটুকু জড়িয়ে মা'কে খোঁজে
মায়ের মাইয়ে মুখ না দিলে বড্ড শীত লাগে
মা এত রাতে কই যায়? ত্রাণ নিতে না দিতে?

এ সমস্ত কুয়াশা
এতসব কনকনে শীত
আর শৈত্যপ্রবাহ আর মৃত্যুযন্ত্রণার দায়ে
তোমাকে দু'মাসের জন্য কোর্টে চালান করা হোক শীতকাল।


  
নোনানুড়ি

যে সমস্ত নোনানুড়ির গায়ে কিছু মুহূর্তের উল্কি এঁকেছিলাম, 
তারা চলে গেছে পরের দৃশ্যচিত্রণের পোশাক পরিবর্তনে 
সব পোশাকে মিথ্যে বলা যায় না
এ সমুদ্র খসড়া সত্য বলতে চায়না, 
কোনার দিকে সরে যাওয়া ঢেউ দেখে বুঝি 
টংঘর ডুবে গেছে গারো কিশোরীর নাভীসহ।
এ সমুদ্র তোমার সতর্ক পায়ের ছাপ মুছে ফেলেছে 
গিলে ফেলেছে ঝিনুকখোসা
যার অনুন্নত বন্ধনীতে আঁকা ছিলো পরের প্রচ্ছদ।
মাচানে পা দোলানো কিশোরীটার কী যেন নাম ছিলো ভাবতেই
বাতাসে হাতের কাগজগুলো উড়ছে ডানায়
তাতে উন্মূল কবিতা লেখা ছিলো 
চিনে ফেলেছি আঙুলের ঘ্রাণ।
দ্রুত চিনে ফেলার মতই দ্রুত নামছে অন্ধকার 
এখনই বলে ফেলি, চোখ ভিজে আসার আগেই
শোনো বুনো সকাল, এ সমুদ্র আমার নয় আমার সমুদ্রটাই আলাদা


                                                (চিত্রঋণ : Vladimir Kush)

4 comments:

  1. নোনানুড়ি আগেও পড়েছি, আমার পছন্দের কবিতা এটি। দুটো কবিতাই খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো প্রকাশ । চিত্রকল্পগুলো সুন্দর ।

    ReplyDelete
  3. সুন্দর। সুমী সিকানদার, স্বাগত আপনাকে।

    ReplyDelete
  4. Dutoi besh. But Nonanuri onek egiye.

    ReplyDelete