চাঁদের গায়ে
চাঁদ লেগেছে
যত্তবার দেখি, আপেলটা আপেল থাকে
নাশপাতির মতো পৃথিবী
ভূগোলের মতো চাঁদ
আর দু-দল রাজনীতির মতো সুমেরু কুমেরু
অর্থাৎ কিছুটা চাপা
কিছুটা না বলতে পারার মত বুকে নিয়ে
বয়ে বেড়ানো
কাল্পনিক সমতল
এর মধ্যে দুটি বিন্দুতেই বেশ
একটা স্কেল দিব্বি দাঁড়িয়ে যায়
একটা ব্রিজের উৎপত্তিগত ইতিহাসে যে
কোন রেখা
এক একটা দৃষ্টিকোণের সমানুপাতিক
মানে দাঁতের কাছে স্বাদ আর খুসবু নিয়ে
যে নজদীকি আর
আরও করীব হয়ে আসা
যে কোন আপেল যেন টের পেয়ে যায়
সেই সব সম্ভাব্য কামড়ের অভিজ্ঞতার
আপন ঘরের খবর
নে না
নাসপাতির বাগান থেকে মাটির গন্ধ আসে
মৌমাছিদের মিতালী থেকে অনেকদূর
এই মোহন সুন্দর রাত্রিকে রুয়ে দেখো
জ্যোৎস্না ফলে ওঠে এই
পৃথিবীর বুকে ?
বন্ধ দুচোখের পাতায় এতটা শিশির ঘোষ
ছিলো,
টেলিভিশন থেকে বেরিয়ে আসা ক্যাথোড রে
উফ আমার নাসপাতির বাগান ছারখার করে
জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে কোনোদিন তো এত
বিদ্ধ হইনি
যে সব ফল ফলেছে আমার বয়ঃসন্ধির দিনে
হাত চাটতে গিয়ে যেদিন প্রথম আঙুল
কামড়ালাম
নখ থেকে ছুটে গেলো হাফ ব্যাক
বল ছুটে গেলে দেখি দুয়ারে পা চেপে ধরে
বেবাক তাকিয়ে আছে ঘর বারান্দা
এই বাগান, এই মধুময়
এতটা গহীন
মাঝরাত থেকে উঠে আসে মাঝমাঠ
এই প্রবাস থেকে আমি আর কি গোল দেবো ?
আমায় এত রাতে
কেন ডাক দিলি
প্রাণ কোকিলার ক্রন্দনের টানা রাত
রাতও তাহলে কেঁদে ওঠে মধ্যরাতে
আঙ্গুলগুলো দেখো এখনো চঞ্চল ,
ডানাগুলো মাউস
কী-গুলোর পাশাপাশি
এই উজ্বল দিনগুলো হেঁটে যায়
ঠিক কতটা দিন হলো,
কিংবা কতটা রাত
মধ্য কিংবা ভোর
যেভাবে কোন অশ্রুর পুংলিঙ্গ হয় না
তাই ঘড়ি থেকে হিসেব নিকেশ
উপড়ে ফেলছি দিন
প্রাণ ধুকপুক,
এই বুঝি ছুটে যায় চুন
এই বুঝি ছিঁড়ে যায় পান
সুপারী বাগানের উপর দিয়ে সংজ্ঞা পালটে
পাখির উড়ে যাওয়া
এই তোতা
তার একটাই রাজ
লুপ্তপ্রায় প্রাণ থেকে তার এইসব
প্রগাঢ় রাত
কোকিলের সাথে বোধহয় কোনোদিন দেখা হয়না
তার
মিলন হবে কত
দিনে
চ্যাটার্জি বাড়ির যতটুকু ব্রাহ্মণবাদ,
রেডিয়াম থেকে উবে যায় ততটুকু আয়ু
আর বিস্তীর্ন দুপার পার হয়ে গেলে
বাকিটা পড়ে থাকা জলংগীর একাকী জীবন
বন থেকে কাঠ হয়ে ওঠে কথোপকথন ।
রাণাঘাট থেকে শিয়ালদহ এইটুকুই দূরত্ব;
এক দর্জেন লেবু লজেন্স আর কাচের বয়াম
এর থেকে বানিজ্য চুষে চুষে বের করো
মুখের উপরে অসংখ্য চাতক
যাত্রাপালার মতন তাদের ধ্বনিময় মুখ
আর রাস্তায় ফেলে যাওয়া বাংলা
আর সেই কৃষ্ণচাঁদের লোলুপ চৌকাঠে
মৌন সৌদাগরের ফিট আয়না
হাতের মুঠো থেকে ফসকে যায় গেরো,
অগণিত মেয়ে মানুষের চোখশুচোদনে
চোখ বিষিয়ে ওঠে
মনের মানুষ বলে কিছু আর
হয় না বোধহয়
পারে লয়ে যাও
আমায়
এপারে অধিক সন্ন্যাসী, ওপারে গাজন
আমাকে প্রলুব্ধ করে ঘোলা জলের প্রবাহ,
চ্যাং, কৈ, কাঁকড়ার ঝাঁক,
জলে ভেজা আউসের ক্ষেত থেকে উঠে আসা সবুজ
আর অস্থিমজ্জার মতো এই বাংলা
ছায়ার মায়া থেকে একমাত্র এই রৌদ্র
ক্ষরণ,
ঘাস পাতা বিচালি পল খড়ের গাদায়
আমি জানি এই খামার একমাত্র সত্য,
এই ক্ষেত থেকে উঠে আসা যে কোন ঘাম
মুখ থেকে মুখাগ্নি পর্যন্ত কাচ্চি
ঘানির মত খাঁটি
ধানক্ষেত থেকে উঠে আসা এই সব মুখ
কাদা আর রক্তে মাখামাখি খেলা, এই ত্বক
স্পর্শ সুখের আশায় খুলে রাখি সুতপা
ম্যাডামের দেওয়া
কন্ডোম প্যাক, উন্মুক্ত করে
রাখি শানিত অস্ত্র
জল পড়ে , পাতা নড়ে
এই মুলিবাঁশের বেড়ার ঘরে আগুনকে
দাবিয়ে রেখে
এক কল্কে ছাই,
এক কল্কে ছিলিম আমাদের সভ্যতার শেষ
চিরাগ,
আমাদের এই গাজনকে কোনোভাবেই আমি
নষ্ট হতে দেবো না ।
লাল পাহাড়ির
দেশে যা
ত্বরণের গ্রাফ দেখো
উপরনীচ লক্ষ্য করো
একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যেতে পারে
সমতল
বক্রতার পরিমাপ নিয়ে
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই সরলরেখা সমূহ
পাহাড় থেকে নেমে আসে অতিরঞ্জিত এই
বাটার ফ্লাই,
এই প্রত্নতত্বের সামনে
প্রাক
প্রস্তরযুগের সভ্যতায়
যে লাউ সেই কদু, যে চাকু সেই
ছুড়ি
যা কিছু কেটে যায় আর যা কিছু কাটে
পাহাড় থেকে ছুটে এই সব অতিরঞ্জিত
ফ্লাই ওভার
গুড়ো হয়ে যাওয়া
অম্বুজ সিমেন্ট
দেওয়াল থেকে তুলে নেওয়া বিজ্ঞাপনে
অবাক চেয়ে থাকা পেন্সিল আর কয়লা
ত্রস্ত পায়ে ছুটে আসে রামধনু শাড়ি
লাল পাহাড়ের দেশে কেউ আর
কালো নেই বুঝি ।
পিন্দারে
পলাশের বন
এমন লাল আমি কোথাও দেখিনি
ধমনীর অন্দরমহলে যে সব মার্কারি
বিবিধ রতন থেকে বঙ্গের মধু
পারস্য উদ্যান থেকে ভূমধ্যসাগর
মিশর ও সাইপ্রাস ঘুরে
এই লোহিত সাগরের নাম দিয়েছি পলাশ ।
বনের পথে গাছের সবুজ গন্ধ ,
এত কাছ থেকে দেখা মাটির ইতিহাস
ইতিহাস বেয়ে আসা ভূগোলের লগ
গুঁড়ির উপর গড়াগড়ি শাল পড়ে আছে
এমন ছিলকা কোনদিন দেখিনি আমি
মায়ের এত কাছে এসে মাসীদের ভূত
নেংটি ইঁদুরের কাছে এসে জীবনানন্দ দাশ
ওই পেঁচা আর সেই পঞ্চমীর রাত
মেদহীন কালরাত্রির দেহে ফুটে ওঠা লাশ
কাটা ঘর
তারপর কত কত দশক পার হয়ে গেলো
এমন পলাশের বন কখনো দেখিনি আমি
(চিত্রঋণ : Il'Ya Glazunov)
বেশ ভালো লাগল। সবক'টাই।
ReplyDeleteনতুন পীযূষ.. :)
ReplyDeleteবেশ ভাল।
ReplyDeleteনতুনত্ব পেলাম । বেশ ভালো লাগলো আমার ।
ReplyDeleteনতুনত্ব পেলাম । বেশ ভালো লাগলো আমার ।
ReplyDeleteনারিক ভাবনাবোধে উজ্জ্বল কবিতাগুলো পড়তে পড়তে ভেতরে গ্রামীণ স্পর্শ টের পেলাম। মাটির ঋজুগন্ধ ছুঁয়ে গেলো মন। ভালো লাগলো পিযপ
ReplyDeleteনাগরিক হবে
ReplyDeleteদারুণ সব কবিতা। সকালে ঘুম ঘুম চোখে; লেপ জড়নো শীতে... পীযূষের কবিতা দিয়ে শুরু হলো দিনের পাঠ। গ্রাম ছুঁয়ে আছে পীযূষের কবিতায় কিন্তু ওঁর কবিতার ভাষা শহুরে যা অন্যমাত্রা দেয়। ভালো লাগে।
ReplyDeleteকবিতার শিরোনাম দেখে যখন ঢুকছি এবং যা প্রত্যাশা করছি, তার থেকেও বেশি পাই কবিতায়, এ এক গভীর পারের আনন্দ বটে।
ReplyDeleteতোমার আগের কবিতার ধারা থেকে এই কবিতাগুলো কিছুটা আলাদা পীযুষ ; সম্ভবত দিল্লির বাকজগতকে ধরার প্রয়াস করছ ।
ReplyDeleteকবির কথায় বলতে হয় এমন কবিতা কখনো পড়িনি আমি । এ এক অন্য ধরনের কবিতা । শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ । কবির যেন এরকম লেখা আরো পড়তে পারি ।
ReplyDeleteমোট সাতটা টেক এ এক পূর্ণ কাহিনীচিত্র।
ReplyDeleteমোট সাতটা টেক এ এক পূর্ণ কাহিনীচিত্র।
ReplyDeleteচাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে ।পীযূষের একগুচ্ছ দুর্বার কবিতা পড়লাম । উচ্চারণ এবং ভাবনার গভীরতা তার লেখার প্রতি অভিনিবেশ বাড়িয়ে তুলল । ধমনীর অন্দরমহলে যেসব মার্কারি এই কবিতা তার চেয়েও উজ্জ্বল। লুপ্তপ্রায় প্রাণ থেকে এক প্রগাঢ় রাত তার কবিতাকে রহস্যাবৃত করে ।প্রতিটি কবিতাই অনুভবের নতুন অনুভাবনার ।সাতটি কবিতা সাত সমুদ্রের সন্ধান দেয় ।
ReplyDelete